Sunday, June 5, 2016

কিছু কথা


 আমরা শয়তানের প্রকার ভেদ নিয়ে আলোচনা কালে জ্বীন ও মানুষ শয়তান নিয়ে কিছু আয়াত ও হাদিস উদ্ধৃত করে প্রমান করেছি যে, তাগুত বলতে আমরা যা কিছু এতদিন বুঝেছি তার মধ্যে কিছু না কিছু গলদ রয়ে গিয়েছিল। যার কারনে আমাদের অনেকের ঈমান অর্থবহ হয়নি বা তারা ঈমানের আসল চেহারা দেখতে পাইনি। এবার তাগুতের আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো ইনশায়াল্লাহ।

নফসে আম্মারা বা খায়েশাত এক প্রকার তাগুত ঃ

কুরআন মজীদে মানুষের নফসের তিনটি রূপ উল্লেখ করা হয়েছে।
এক,একটি "নফস"মানুষকে মন্দ কাজে প্ররোচিত করে। এটির নাম "নফসে আম্মারা"।

দুই, একটি "নফস" ভুল বা অন্যায় কাজ করলে অথবা ভুল বা অন্যায় বিষয়ে চিন্তা করলে কিংবা খারাপ নিয়ত রাখলে লজ্জিত হয় এবং সেজন্য মানুষকে তিরস্কার ও ভৎর্সনা করে। এটির নাম "নফসে লাউয়ামাহ"। আধুনিক পরিভাষায় একেই আমরা বিবেক বলে থাকি।

তিন, যে নফসটি সঠিক পথে চললে এবং ভূল ও অন্যায়ের পথ পরিত্যাগ করলে তৃপ্তি ও প্রশান্তি অনুভব করে তাকে বলে "নফসে মুত্মাইন্নাহা"। (তাফহিমুল কোরআন)

এই তিন প্রকার নফসের ভিতরে নফসে আম্মারা মানুষকে কুফরির দিকে নিয়ে যেতে স্বিদ্ধহস্ত। এর প্রভাবে মানুষ খারাপ আর ঘৃনিত কাজকেও বৈধ আর কল্যানকর মনে করে থাকে। নফসে আম্মারা মাুনষকে কেবল মাত্র খারাপ কাজ ও চিন্তার দিকে ধাবিত করে তাই নয়, বরং মানুষকে খারাপ কাজের সমর্থক বানিয়ে দিয়ে তার গোলামে পরিনত করে থাকে। এই অবস্থায় সেই নফসের অধিকারী ব্যক্তিটি নিজেও আস্তে আস্তে তাগুতের রুপ ধারন করতে থাকে। এমন সব ব্যক্তিরা যে কোন কাজকে নিজেদের নফসের স্বিদ্ধান্ত মতো করে থাকে, অর্থ্যাৎ ভালো আর মন্দের মাপকাঠি তাদের কাছে এই নফসে আম্মারা। নফসের প্রভাব কোন মানুষের ওপর যখন সত্যিকারের অর্থে শক্তিশালী ও কার্যকর হয়ে যায় তখন তার থেকে ভালো কিছু আশা করা অত্যান্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এ জাতিয় লোকের ধিরে ধিরে তাগুতের রুপ ধারন করে থাকে। শয়তান মানুষকে নিজের কব্জায় নেয়ার জন্য এই নফসে আম্মারা কে ব্যাবহার করে। অতঃপর কোন ব্যক্তির কর্মকান্ড আর কথাবার্তায় শয়তানের সাথে কিঞ্চিত পরিমানও পার্থক্য থাকেনা। শয়তান যা করার দরকার সেই ব্যক্তিটি কে দিয়েই করিয়ে নেয়।

নফসে আম্মারা বা খায়েশাত কে কোরআনের আরো একটি শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। একে বলে ( هَوَا ) হাওয়া বা কামনা বাসনা। এই হাওয়া বা খায়েশাতের পুজারী লোকেরা কোন কালেই ঈমানের স্বাধ পেতে পারে না। এরা আল্লাহর হুকুমের চাইতেও তাদের খায়েসের হুকুম কে বড় মনে করে থাকে। তাদের কাছে ভালো মন্দের দলিল হচ্ছে তাদের নফসের ভালো লাগা বা চাওয়া পাওয়া। এই কুফরি চিন্তাটাকে কে অধুনা মুক্তচিন্তা নামে প্রচার করা হচ্ছে। মুক্ত চিন্তার ফেরিওয়ালারা প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম কে টার্গেট বানিয়ে নিয়েছে। এর যথেষ্ট কারনও বিদ্যমান রয়েছে। শয়তান ও তার অনুশারীরা খুব ভালো করেই বুঝতে পারে যে, ইসলামের শাশ্বত বিধানে কোথায় মুক্তচিন্তা বা নফসের গোলামীর সুযোগ রাখা হয়নি।

কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ ও তার রাসুলের (স) হুকুমের বিরুদ্ধে দাড় করানোর জন্য সোজা পথে না গিয়ে অত্যান্ত চতুরতার সাথে নফস পুজাকে মুক্ত চিন্তা নামে প্রচার করে এর কতগুলো বৈশিষ্ট দান করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য দিক হচ্ছে নিজের জ্ঞানকে বিশ্বাস করতে শিখা। নিজের জ্ঞান বলতে মনের ভালো লাগা কে সমর্থন করা। মানবাতিদের মুখে এই শ্লোগান আবার নতুন করে শোনা যাচেছ যে, ধর্ম মানুষকে নিজের মনের বাইরে গিয়ে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিচালিত করে মানুষের মানবিক অধিকার হরন করে থাকে। এটা যে মুর্খতা সুলভ উক্তি সেটা জ্ঞানী মাত্রই বুঝতে পারেন। নতুবা মানুষের চাওয়া পাওয়া আর রুচি বোধ হরেক রকমের হতে পারে, ভালো মন্দ সব কিছুকে সাধারন হুকুমের আওয়াতয় এনে যা ইচ্ছে তা করতে দিলে যে বহু মানুষের মানবিক অধিকার প্রতিনিয়ত হরন হতে থাকবে এটা বুঝার ক্ষমতা তাদের মানবতা বাদি মাথায় নেই।

তাদের মতে মুক্ত চিন্তা হচ্ছে জীবন সমষ্যার সমাধানে নিজস্ব জ্ঞান আর চাওয়া পাওয়াকে মানদন্ড বানিয়ে নিয়ে তার অন্ধ অনুশরন করা। হৃদয়ে ভালো লাগা আর ভালো বাসার বাইরে কোন বিধান নেই এমন উক্তিও হারহামেশা উচ্চারিত হয় এ জাতিয় ফেরিওয়ালাদের মুখে। এরা খুব ভালো করে জানে যে, পৃথিবীর কোন ধর্ম মানুষের জীবনের সকল সমষ্যার সমাধানে বৈজ্ঞানীক উপায় বাতলে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সকল ধর্ম যেখানে জাগতিক সমষ্যার সমাধানে সম্পুর্ন রুপে ব্যর্থ হয়ে যায়, সেখানে ইসলাম একামাত্র ধর্ম যে মানুষের সকল সমষ্যার বৈজ্ঞানীক সমাধান দিতে সক্ষম হয়। এ সত্যটি কে তারা উপলদ্ধি করতে পেরেছে এবং এই কারনে তারা মানুষের সামনে মুক্ত চিন্তার নামে নফসের খায়েশাত কে চরিতার্থ করার নিত্য নতুন মন্ত্র শিখাচ্ছে।

নফসের পুজারীদের কাছে মনের চাওয়া পাওয়া আর ভালো লাগাই বড় কথা। এর কোন জবাবদীহিতার প্রয়োজন নেই। তোমার অন্তর যাকে ভালো বলে, তোমার মন যে কাজে তোমাকে শান্তি দেয় সেটাকে তুমি তোমার জন্য কল্যানকর ভাবতে শিখবে এবং এর পক্ষে আওয়াজ তুলে মানুষকেও সেদিকে ডাকতে থাকবে। এর বিপরিতে যত চিন্তা চেতনা আছে সেগুলোকে স্বযতেœ যুক্তির মাধ্যমে এড়িয়ে যাবে। তোমারা চিন্তা শক্তির ওপর তুমি আস্থা রাখতে শিখেবে। দুনিয়াকে কোন পুথির ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং নিজের মন থেকে যাচাই করে গ্রহন করো। নফসের বা মনের স্বিদ্ধান্ত কে অহির মতো মনে করো।

অধুনা আমাদের সাহিত্যিকদের মধ্যে থেকেও কিছু কুলাংঙ্গারের জন্ম হয়েছে যারা তরুনদের কে বাস্তববাদি, মানবতাবাদি বানানোর নামে নফসের পুজারী বানানোর টার্গেট নিয়েছেন। এ জাতিয় লেখকদের একজনের একটি বই পড়ার সুযোগ হয়েছিল। তার উক্তি মতে ভালো মন্দ যাচাই করার জন্য নিজের মন কে জিজ্ঞেস করো, যদি মন সায় দেয় তাহলে কোন সংস্কারের পরোয়া না করে নিজের মনকে সমর্থন দাও। এতে তুমি তৃপ্তি পাবে। নিজের ইচ্ছা শক্তি কে আবদ্ধ করে রেখো না। বলে রাখা দরকার যে, তাদের দৃষ্টিতে কুসংস্কার বলতে একমাত্র ইসলাম ধর্মই রয়েছে এই জগতে। এসব লোকেরা যখন নিজের নামের আগে এমন কিছু শব্দ যোগ করে যাতে তাদের কে মুসলমান মনে হয় তখন আমাদের কিছু ভাইরা ধোকা খেয়ে যান। সত্যিকারের ঈমানদারগন যখন এ জাতিয় লোকদের কুফরি কথা আর চিন্তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে তখন কতিপয় তোষামদ কারী মুবাল্লিগের অন্তরে একরামুল মুসলিমিনের জোশ উঠে যায়। এদের কে কাফের বলে ঘোষনা দিতে বা চিন্তা করতেও তাদের কষ্ট হয়। এ কারনে মাঝে মাঝে তাদের কাছে খুব জানতে ইচ্ছে করে যে, আর কত কুফরি করলে একজন লোককে কাফের আখ্যায়িত করা যাবে । ইসলাম কে নিয়ে প্রতিনিয়ত কত রকমে তামাশা করলে কারো কর্মকান্ডকে কুফরি আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করা হবে ? আল্লাহ ও তার রাসুলের (স) দেওয়া শ্বাশ্যত বিধান কে কত রকমে বর্বর, জাহেলী, অন্ধাকর যুগের বর্বরতা নামে আখ্যায়িত করলে তারা কাফের হবেন। এদের হাত কে যারা জেনে বুঝে শক্তি শালী করছেন, তাদের কে সমাজে প্রতিষ্টিত করে চলছেন, সেসব নামধারী কতজন মুসলমানকে নামাজ রোজা শিক্ষা দিয়ে আমাকে জান্নাতের সার্টিফিকেট নিতে হবে ? অথচ আমরা তাদের কে একবারের জন্য বলতে পারছি না যে, তুমি তাগুতের সংঙ্গী বা সমর্থক তোমার নামাজ রোজার পুর্বে অত্যান্ত জরুরী করনিয় হলো এই যে, তুমি তাগুত গুলো কে পরিহার করো অতপর ঈমানের ঘোষনা দাও। এর পরে তোমাকে নামাজ কালাম শিখানো যেতে পারে। আমরা সেটা করছি না। কারন এখানে আমাদের নফস আমাদের কে বাধা দিচ্ছে অথর্ব যুক্তি আর দলিলের দোহাই দিয়ে। অথচ কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াত ও তার রাসুলের (স) হুকুম হচ্ছে আল্লাহর বন্দেগী করার পুর্বে প্রত্যেক মানুষকে তাগুত কে পরিহার করতে হবে। কোরআনের এই আয়াতটি দেখুন।

وَالَّذِينَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوتَ أَن يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوا إِلَى اللَّهِ لَهُمُ الْبُشْرَىٰ ۚ فَبَشِّرْ عِبَادِ
যেসব লোক তাগুতের দাসত্ব বর্জন করেছে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে তাদের জন্য সু-সুংবাদ৷ [হে নবী (সা)] আমার সেসব বান্দাদের সুসংবাদ দিয়ে দাও। সুরা য়ুমার-১৭।


এ জাতিয় মুবাল্লিগ ভাইদের তোষামদ আর সার্টিফিকেটের বদৌলতেই এসব নামধারী মুসলমানরা আমাদের উদিয়মান তরুনদের কে মুসলিম বুদ্ধিজীবির বেশ ধারন করে নফসের পুজান আপডেট ভার্সন মুক্তাচিন্তায় মগ্ন থাকার মন্ত্র শিখাচেছ। এসব তুরুনরা যদি সাধারন কোন মন্দিরে গিয়ে উল্লাস করে যেটা বর্তমানের বাঙ্গালী উৎসব বলে অত্যান্ত চতুরতার সাথে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমাদরে বুজুর্গরা তাকে কুফরি বলে ফতোয়া দেন, কিন্তু সেই তরুনটিকে যখন নফসের মন্দিরে মাথা গুজে থাকার আদব শিক্ষা দিয়ে নফসের পুজারী বানিয়ে দেওয়া হয় এবং এ জাতিয় তরুন যখন মুক্তচিন্তার পতাকা নিয়ে দিনের পর দিন ইসলাম বিরোধীতে ক্রিড়ানকে পরিনতি হয়ে তাদের হাতিয়া হয়ে যায়, তখন তাদের কে কুফর বলতে এসব খ্যাতিমান মুবাল্লিগদের দ্বীন বড় বাধা হয়ে দাড়ায়। বড় আজিব তাদের ঈমানী চেতনা।

এভাবে বর্তমান তরুনদের অধিকাংশকে নফসের পুজারী বানানোর চেষ্টা চলছে যাতে তারা তাদের কামনা বাসনার দিকে ধাবিত হয়ে যায়। অথচ পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং চেতনার অভাবে তারা এটা ঘুনাক্ষরেও জানতে পারে না যে, তাদের ভিতরে অবস্থান করা এক শক্তিশালী তাগুত তাদের কে খোদাদ্রোহী ও সিমালংঘনের দিকে প্রতিনিয়ত ধাবিত করছে। এই মহা সত্যটি যে ব্যক্তি উপলদ্ধি করতে পেরেছেন তিনি তার নফসের খায়েশাত কে অস্বিকার করে তার ভিতরকার হাওয়া নামের তাগুতের সাথে কুফরির ঘোষনা দিয়ে আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছেন। যতক্ষন পর্যন্ত না নফসের এই হাওয়া কে সম্পুর্ন রুপে অস্কিকার করা হয় এবং কেবল মাত্র আল্লাহ ও তার রাসুলের (স) হুকুমের দিকে ফিরে আসা হয় ততক্ষন পর্যন্ত কোন ব্যক্তি নিজেকে মুসলমান দাবি করতে পারেন না। কেউ যদি দাবি করেনও তার এই দাবির কোন যথার্থ নেই। এটা তামাশা মাত্র।

এখানে একটি প্রশ্ন অত্যান্ত স্বাভাবিক যে, আমরা নফসের তাড়নায় যেসব গুনাহ করে বসি বা যেসকল ফাহেশা কাজ আমাদের দ্বারা হয়ে যায় (নাউজুবিল্লাহ) তাকে নফসের পুজা আখ্যায়িত করা যায় কি না ? এ অবস্থায় নফসকে অস্বিকার করার শর্ত পুরন হলো কি না ?

উত্তর হচ্ছে এই যে, নফসের তাড়নায় এবং শয়তানের ওসয়াসায় যে কোন অপরাধ করে ফেলা মানুষের বৈশিষ্টের মধ্যেই রাখা হয়েছে। মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় পড়তেই পারে, বা ইচ্ছা অনিচ্ছায় তার দ্বারা গুনাহ হতেই পারে, এ কারনে সে নফসের গোলাম হয়ে যায় না। তার কারন হচ্ছে যে ব্যক্তি তার নফসের গোলামীকে অস্বিকার করে সে তার কৃতকর্মের জন্য সাথে সাথে তওবা করে এবং আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প করে নেয়। বিষয়টি কে পরিস্কার করার জন্য একটি উদাহারন দেওয়া যেতে পারে।

কোন মানুষ হটাৎ করে অভাবের তাড়নায় চুরি করতে পারে বা ডাকাতি করতে পারে, কিন্তু সে এই কাজটি কে অপরাধ হিসেবে মাথায় নিয়েই সেটা করে। অর্থ্যাৎ কাজটি যে আল্লাহ ও তার রাসুলের (স) হুকুমের খেলাফ সে এটা মেনে নিয়েই করে। এ কারনে এই ব্যক্তিটি ফাসেক হবেন কিন্তু তাগুত হবেন না। কিন্তু ব্যাপারটি যদি এমন হয় সে উপরোক্ত কাজকে কোন অবস্থায় খারাপ বলে বিশ্বাস করে না, বা এসব ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তার রাসুলের (স) হুকুম কি তা জানার আদৌ প্রয়োজন বোধ করেনা এবং একে ভালো কাজ বলে মনে করে তাহলে সে সুস্পষ্ট ভাবে কুফরি করছে। একটু আগিয়ে সে যদি তার চিন্তা কে মানুষের মাঝে বিতরন করে বহুল প্রচার করার চিন্তায় থাকে এই ভেবে যে, সাধারন মানুষ তার এই মতবাদ কে বিশ্বাস করে মেনে নেবে তাহলে সেই ব্যক্তিটি তাগুত হয়ে যাবে। কারন সে এখানে আল্লাহ ও তার রাসুলের হুকুম কে চ্যালেঞ্জ করছে। যেটা তাগুতের প্রথম বৈশিষ্ট।

ফেরাউনের বিষয়টিও তেমনি। তাকে তাগুত বলার কারন হচ্ছে, সে নিজেও আল্লাহর সাথে কুফরি করছে এবং বনী ঈসরাইল সহ অন্যান্য সাধারন মানুষদের কে তার হুকুমের গোলাম বানিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি সে তার কর্মকান্ডকে বৈধ বলে ঘোষনা করছে যার স্পক্ষে কোন দলিল ছিলনা।

আমলের ক্ষেত্রে নফসের প্রভাবে পড়ে যাওয়া বড় কথা নয়। বরং যে কোন কাজের পথ নির্দেশনা বা কাজের শুরুতে এর বৈধতা বা কল্যানকারীতা নির্ধারনে নিজের মন কে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে যাওয়া কে অত্যান্ত বৈধ মনে করে সেই বিষয়ে আল্লাহ ও তার রাসুলের (স) হুকুমকে অকার্যকরী ভেবে নেওয়া কে কুফরি বলা হয়। কেউ যদি এমন কোন আইন বিধান কে কায়েম করে নেওয়ার চেষ্টা করে যা কোরআন এবং সুন্নাহর খেলাফ, অথচ সেই ব্যক্তিটি একে উত্তম এবং প্রয়োজনীয় বলে দাবি করছে, আল্লাহ ও তার রাসুলের রেখে যাওয়া বিধান কে কোন যুক্তিতেই হোক না কেন বাতিল করে দিচ্ছে সেই ব্যক্তি তার কাজে মাত্রা এবং পরিধি অনুযায়ী কুফর বা তাগুতের সংজ্ঞায় পড়ে যাবেন। এটা নিয়ে উম্মাতের মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই।


নফসের পুজায় ব্যক্তিবর্গরা হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হয়ে যান। কারন তারা মনে করেন যে, তারা যেটা করছেন সেটাই একমাত্র উত্তম বা বৈধ কাজ। এই বিষয়ে আমার জীবনের একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।

একবার কলেজের এক প্রফেসরের সাথে আমার প্রচলিত রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছিল। তিনি আমাকে প্রগতিশীল রাজনীতি ও তার প্রয়োজনীয়তার অনেক ভালো দিক নিয়ে জ্ঞানগর্ভ (?) বয়না শুনালেন। কথার ফাকে তিনি আমার কাজে জানতে চাইলেন যে, আমি কেন ইসলামী আন্দোলন করছি, অথচ আমার সকল ভাইরা অন্যান্য বুর্ঝয়া দল করে মোটামোটি ভালোই কামাচ্ছে। আমি তাকে কোন সুযোগ না দিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলাম যে, আপনি যে আপনার দলটিকে এবং তার কর্মকান্ডকে সমর্থন করছেন তা কিসের ভিত্তিতে যাচাই বাছাই করেছেন ?

তিনি বললেন, এই দলটির ইতিহাস আছে, তাছাড়া এদের সমর্থন অনেক বেশি রয়েছে। তারা গনমানুষের অতি নিকটে রয়েছে। আরো সব দিক যাচাই বাছাই করে আমার এই দলটিকে ভালো লেগেছে। তাই তো আমি এই দলটি কে সাপোর্ট করি।

আমি প্রশ্ন করলাম, ভালো লাগা আর না লাগার মানদন্ডটি আপনি কোথা থেকে নিয়েছেন বা কিসের ভিত্তিতে আপনি ভালো আর মন্দ যাচাই বাছাই করেন ? বহু সংখ্যক লোক কোন কাজ করবে বলেই সেটা বৈধ হয়ে যায় না। যদি তাই হতো তাহলে দুনিয়ার মুশরিকদের সংখ্যা মুসলমানদের থেকে অনেক বেশি, এই হিসেবে আমাদের উচিত হতো তাদের ধর্মের অনুশারী হয়ে যাওয়া। অথচ আমরা সেটা করছি না। একারনে আপনার এই যুক্তিটি একেবারেই খোড়া তা বলাই বাহুল্য। এ কারনে জানতে ইচ্ছে করছে যে, আপনি কিসের ভিত্তিতে যাচাই বাছাই করেন ? আপনার মানদন্ড কি ?

তিনি সোজা বলে দিলেন যে, আমার ভালো লাগা আর পছন্দ অপছন্দ আছে না ? আমার কি জ্ঞান নেই। আমি কি অজ্ঞ ?

আমি বললাম, ভালো লাগা আর পছন্দ অপছন্দ আপনাকে কে ঠিক করে দেয় ? তিনি আমার প্রশ্নের উদ্ধেশ্য বুঝতে পারছেন না বলে এক প্রকার বিরক্ত হয়েই বললেন, আরে আমাার মন আছে না, আমার মন বলছে এটা ভালো ওটা মন্দ। মানুষ কি দিয়ে পছন্দ করে, মন দিয়ে না। এটাও কি তুমি বুঝতে পারছো না ?

আমি বললাম, আরে জনাব আপনার রোগ তো আমি অনেক আগেই বুঝে গেছি, শুধুমাত্র আপনার মুখ দিয়ে আসল কথাটি বের করার জন্যই তো শিয়ালের সেই গল্পের মতো করে এত তেনা পেচানো। আচ্ছা আমাকে বলূন তো, কোন মুসলমানের এমন অধিকার আছে কি না যে, সে তা জীবনের কোন বিষয়ের স্বিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে নিজের মনের তথা নফসের চাওয়া পাওয়া কে মানদন্ড বানাবে। আপনি দৈনিক পাচ বার আল্লাহর পুজা করেন, অথচ দিনের মধ্যে শতবার বা হাজারো বার নফসের পুজা করে বেড়াবেন আর এভাবেই নিজের নফসকে ইলাহা হিসেবে ঘোষনা করবেন এটা কত বড় মুর্খতা তা কি বলতে পারেন ? নফসের পুজা যদি করতেই হয়ে তাহলে নিজেকে উম্মাতের বর্হিভুত ঘোষনা করুন। আপনারা বলে দিনে যে, আমরা স্বাধীন হয়ে গেছি। আমাদের জন্য দ্বীন আর শরীয়াত নামের কোন জিনিস নেই। আমাদের মন যেটাকে সায় দেবে চোখ কান বন্ধ করে আমরা সেটার অনুসরন করবো, এ ক্ষেত্রে দেখার দরকার নেই যে, আল্লাহ ও তার রাসুল (স) সেই বিষয়ে কি নির্দেশনা দিয়েছেন। কারন আমরা আল্লাহর ওপর কতিপয় বিষয়ে ঈমান এনেছি, সার্বিক ভাবে তার সামনে আতœসম্পর্ন করিনি। কেননা কতিপয় বিষয়ে তাদের দুজনের চাইতেও আমাদের কাছে আরো কিছু অগ্রগামী সত্ত্বা আছে যারা এসব বিষয়ে আমাদের কে ভালো পথ নির্দেশনা দান করতে পারে যা একেবারে আমাদের মনের মতো এবং সেটা অবশ্যই যুগের প্রগতির সংঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করে।

তিনি বললেন, আরে এখানে আবার ধর্মকে টানো কেন ? ধর্ম হচ্ছে চর্চার ব্যাপার। ব্যক্তি জীবনে মানুষ ধর্ম চর্চা করবে কিন্তু তার নিজের পছন্দ অপছন্দ থাকবে না এটা কেমন কথা। দুনিয়াবি বিষয়ে আমাদের কে নিজের মতো করে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, পাশাপাশি প্রত্যের্েক তার ধর্ম অনুযায়ী ধর্ম চর্চা করবে। এতে দোষের কি ? ধর্ম কে সব জায়গায় টেনে এনে তোমরা ধর্মকে হাসির পাত্র বানিয়ে দিচ্ছ।

আমি বললাম যে, এই চিন্তাও আপনাকে আপনার ভিতরকার নফস নামের তাগুত শিক্ষা দিয়েছে এবং আপনাকে সে নিজের গোলাম বানিয়ে নিয়েছে। আপনার দেখানো ধর্ম চর্চার কোন স্থান আল্লাহর ও তার রাসুলের (স) রেখে যাওয়া দ্বীনের কোন অংশেও নেই। এ জাতিয় চিন্তা যিনি করবেন তিনি কোন প্রকার ভুমিকা ছাড়াই কাফের হয়ে যাবেন। তার ধর্ম চর্চার কোন প্রযোজন নেই । যারা আল্লাহর হুকুমকে বিবাজন করে নিয়ে কোন অংশ মানে আর কোন অংশকে কুফরি করে তারা তো ইয়াহুদীদের চেয়ে খারাপ পরিনতি বরন করবে। কেননা কারো কাছে যদি মনে হয় যে, আল্লাহর দেয়া বিধান মানুষের কল্যান করতে পারে না বা বর্তমান সময়ে আল্লাহর দেযা বিধান গ্রহনযোগ্য নয়। এই বিধান অমুসলিমদের জন্য শান্তি আ নিরাপত্থা দিতে পারবে না বা তাদের অধিকার রক্ষায় সক্ষম নয়, তাহলে সেই ব্যক্তি কি করে মুসলমান হতে পারে ?

এ জাতিয় মুসলমানের কয়েক লক্ষ নামাজ আর হজ্ব কি কোন কাজে আসবে। ইবাদত বন্দিগির নামে যে নাটক তিনি প্রতিনিয়ত মঞ্চস্থ করছেন তাতে তার পরকালে কোন কল্যান বয়ে আনতে পারে না। বরং এগুলো দুনিয়ার জীবনেই ছাই করে দেওয়া হয়। এ জাতিয় লোকেরা খোদার বান্দার কাতার থেকে খারিজ হয়ে যান, তাই তারা তাদের কোন আমলের প্রতিদান পাবেন না। যে কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করার সাথে সাথে তাকে স্বিকার করতে হবে যে, যেটা সে করলো এটা খারাপ কাজ ছিলো, তাহলেও সে রেহাই পাবে এবং তওবার সুযোগ পেতে পারে, কিন্তু কোন খারাপ কাজকে খারাপ বলতে অস্কিকার করে তার পক্ষে নিজের মনগড়া দলিল আদিল্লা উপস্থান করার মানে হচ্ছে এই ব্যক্তিটি আল্লাহ ও তার রাসুলেরও হুকুম থেকে নিজেকে আজাদ করে নিয়েছে অথবা আল্লাহর দেওয়া হুকুমের চাইতেও নিজের নফসের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিয়ে একে কল্যানকর মনে করে আল্লাহর হুকুমকে চ্যালেঞ্জ করছে। এ সমস্ত ব্যক্তিরা কি করে মুসলমান হতে পারে।

এবার আমি আপনাকে আমার কথার পিছনে কোন ব্যক্তিগত যুক্তি নয়, সরাসরি কোরআন এবং হাদিস থেকে দলিল উদ্ধৃত করছি। কারন আমার নফসের কাছে অনেক যুক্তি প্রমান মওজুদ রয়েছে কিন্তু কোন দলিল নেই,সত্যিকারের জ্ঞান নেই। সত্যিকারের জ্ঞান রয়েছে আল্লাহ ও তার রাসুলের কথায়। কোন মানুষ, কোন বিজ্ঞানী মানব জাতির জন্য কল্যানকামী হতে পারেন কিন্তু বিশুদ্ধ চিন্তায় মানুকে ভালো মন্দের পথ দেখাতে সক্ষম নন। আমার আল্লাহর চাইতে মানুষের কল্যানকামী আর কে হতে পারে। তিনিই উত্তর পথ প্রদর্শক। এটা যদি আপনি মেনে নেন তাহলে আমি দলিল উপস্থাপন করতে পারি। প্রফেসব সাহেব মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।

আমি আমার আলোচনা শুরু করলাম।

১. আল্লাহ দ্বীনে কোন মুসলমনানের ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে কোন জিনিস রাখা হয়নি। এর কারন হলো এই যে, মানুষ বিশেষ করে যারা ঈমান আনার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজের সত্ত্বাকে বিক্রি করে দেয় এবং তার কাছে সম্পুর্ন আতœ সমর্পন করে তাকে মুমিন বা ঈমানদার বলে এবং এ জাতিয় লোকেরা আল্লাহর গোলামী তালিকায় নাম লেখান এবং স্বভাবতই তারা যা কিছু আমল করবেন তার যোগ্য প্রতিদান পাবেন। কেউ যদি আল্লাহর কাছে আতœ সমর্পন করে এবং নিজেকে তার গোলাম হিসেবে ঘোষনা করে তাহলে সেই ব্যক্তি কি করে কোন বিষয়ে নিজের মর্জি মতো চলতে পারে বা নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা দাবি করতে পারে। গোলামের আবার স্বাধীনতা থাকে কি করে। তবে হ্যা, যারা আল্লাহর গোলামীর খাতা থেকে জ্ঞাত সারে বা অজ্ঞাতসারে নিজেদের নাম কাটিয়ে নিয়েছেন তারাই কেবল ব্যক্তি স্বাধীনতার দাবি করতে পারেন কোন মুসলমান নয়। মুসলমানদের প্রতিটি প্রদক্ষেপের জন্য যেই মৌলিক নিতীমালা নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে তার থেকে এক চুল পরিমান আগে পিছে যাওয়ার কোন হুকুম তাদের কে দেওয়া হয়নি। আল্লাহ ও তার রাসুল কোন বিষয়ে ফয়সালা দিয়ে দেওয়ার পরে কারো জন্য বৈধ নয় এই বিষয়ে মতামত দেওয়া। কোরআন বলছে-

مَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا
যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা (বা নিজের মতামত ব্যক্ত) করার কোনো অধিকার নেই। আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়। সুরা আহযাব-৩৬।

কোন বিষয়ে আল্লাহ ও তার রাসুলের (স) ফয়সালা পাওয়ার পরে তাকে সর্বান্তকরনে মেনে নেওয়া ছাড়া মুমিন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। নিজের পছন্দ হলো তো মানলাম, আর ভালো না লাগলে তাকে এড়িয়ে গিযে নিজের মতো করে ফয়সালা করে পথ চললাম এমনটি করলে কেউ আর মুসলমান থাকেন না। কোরআনের আয়াত দেখুন-

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
না, হে মুহাম্মদ ! তোমার রবের কসম, এরা কখনো মুনিন হতে পারে না যতক্ষণ এদের পারস্পারিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে তোমাকেই ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নেবে, তারপর তুমি যা ফায়সালা করবে তার ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্য যে কোন প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে না, বরং সর্বান্তকরণে মেনে নেবে। সুরা নিসা-৬৫।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হুজুর (স) বলেন, ''তোমাদের কোন ব্যক্তি মু'মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমি যে পদ্ধতির প্রবর্তন করেছি তার অধীনত স্বীকার করে নেবে"। আল্লাহর দেয়া বিধান কে কটাক্ষ করে এই বিধান কে সমাজ ও রাষ্টে জন্য অনুপযোগী ঘোষনা করে তার প্রতিষ্টায় বিরোধীতার ষোল কলা পুর্ন করার পরে কোন ব্যক্তি কি করে মুসলমান দাবি করতে পারে।

শুধু কি তাই ? যে কোন বিষয়ে আল্লাহ ও তার রাসুল (স) থেকে এগিয়ে যাওয়া এক ধরনের অপরাধ। কোরআনের সুরা হুজরাতের এই আয়াতটি দেখুন।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
হে মু’মিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রসূলের চেয়ে অগ্রগামী হয়ো না। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন। আয়াত-১।

এ নির্দেশটি শুধু মুসলমানদের ব্যক্তিগত ব্যাপারসমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের সমস্ত সামাজিক ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য । প্রকৃতপক্ষে এটি ইসলামী আইনের মৌলিক দফা । মুসলমানদের সরকার, বিচারালয় এবং পার্লামেন্ট কোন কিছুই এ আইন থেকে মুক্ত নয় ।

নফসের খায়েস মতো আইন বিধান তৈরি করে পথ চলা আর তাকে নিজের ইলাহ রুপে গ্রহন করে নেওয়া একই কথা। কোন ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে কোন গুনাহ করে ফেলে এই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয় যে, সে নফসের পুজা করছে। বরং যে কোন কাজ করার পুর্ব মুহুর্র্তে কেউ যদি কাজটির ভালো মন্দ বা বৈধ অবৈধতা নির্নয়ে কেবল মাত্র নিজের নফসের দেখানো পথকেই সঠিক মনে করে বা নিজের ভালো লাগাকে অগ্রাধিকার দেয়, সেই ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নফসের পুজা করছে।

ধরুন আপনি এমন একটি কাজ করছেন যা কোরআন এবং সহিহ হাদিস অনুসারে গুনাহের কাজ বা সিমালংঘন বলে সাব্যস্ত হয়েছে কিন্তু আপনি আপনার মনে ভালো লাগা বা খায়েশাতের মাধ্যমে সেই কাজটি কে সম্পুর্ন জায়েজ বা ভালো কাজ বলে দাবি করলেন এবং প্রতিনিয়ত সেই কাজটি নিজে করে চলছেন এবং অন্যকে করার জন্য উৎসাহিত করে চলছেন, তাহলে ধরেই নিতে হয় যে, আপনার কাছে দলিল হচ্ছে আপনার ভালো লাগা। আর কোন মুসলমানের জন্য এই সুযোগ রাখা হয়নি যে, আল্লাহ ও তার রাসুলের (স) কোন নির্দেশের পরে সে নিজের মতো করে রায় দেবে। কোন ব্যক্তি তো দুরে থাক, গোটা উম্মাতের ইজমাও আল্লাহ ও তার রাসুলের (স) খেলাফ যেতে পারে না বা গেলেও সেটা গ্রহনযোগ্য নয়, সম্পুর্ন বাতিল।

কোন এক ছাত্র কে বলা হলো তুমি সেকুল্যার রাজনীতি কেন করছো, সে জবাব দিলো এটা আমার মনের ইচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সেই ছেলেটি তার নফসের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। যেহেতু তার কাছে ভালো মন্দু কে তুলে ধরা হয়েছে কোরআন হাদিস দিয়ে। অথচ সে তার নফসের চাহিদা মতো ইসলমা বিরোধীতাকে পছন্দ করেছে। এই সকল বিষয়ের দিকে নজর দিয়ে বলা যেতে পারে যে, যারা কোন কার্য সংগটিত করা বা কোন কিছু কে পছন্দ করার ক্ষেত্রে নফসের দিকে দৃষ্টি দেন, এবং নফসের চাহিদাকে পুরন করেন তারা মুলত তাদের নফসকে হুকুমকর্তা বা এক প্রকার ইলাহ হিসেবে গ্রহন করে নেন। কোরআনের আয়াত দেখুন।

أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلاً أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلاً-

(হে নবী !) যে ব্যক্তি নিজের নফসের ইচ্ছাকে নিজের খোদা বানিয়ে নিয়েছে, তুমি কি তার সম্পর্কে ভেবে দেখেছ ? তুমি কি এ ধরনের মানুষের পাহারাদারী করতে পার ? তুমি কি মনে কর যে, এদের মধ্যে অনেক লোকই (তোমার দাওয়াত) মানে এবং বুঝে ? কখনও নয়। এরা তো একেবারে জন্তু-জানোয়ারের মত বরং তা অপেক্ষাও এরা নিকৃষ্ট।” সুরা ফোরকান-৪৩-৪৪।

আরেক জায়গায় বলা হচ্ছে-
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
আল্লাহর দেয়া বিধান কে পরিত্যাগ করে যে ব্যক্তি নিজের নফসের খায়েশাত মতো চলে তার থেকে অধিক গোমরাহ, পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে। আল্লাহ জালিমদের কে কখনো হেদায়েত দান করেন না। সুরা কাসাস।

আল্লাহ মুমিনদের জান মাল কিনে নিয়েছেন, বিক্রিকৃত কোন জিনিসের প্রতি কারো নিজস্ব কতৃত্ব থাকতে পারে না বা তাকে নিজের ইচ্ছে মতো ব্যবহার করার কোন সুযোগ মানুষের আইনেও রাখা হয়নি। অথচ বোকার মতো আমরা সেই ধরনে আচরন করছি। এক দিকে জান্নাত পাওয়ার ফিকির করছি, অন্যদিকে আল্লাহর কাছে যেই জান আর মাল বিক্রি করে দিয়ে ঈমানের খাতায় নাম লিখিয়েছি, সেই জান মাল কে আল্লাহর মর্জির খেলাফই নয়, বরং তার সার্বভৌমত্ব ও রাজত্বের বিরুদ্ধেও ব্যাবহার করছি। তার দেয়া বিধান কে সেকেলে বেকডেটেক, র্ববর মধ্যযুগের বিধান বলে তামাশা করছি তার পরেও আমরা মুমিন হিসেবে নিজেদের কে জাহির করছি। অথচ কোরআন বলছে, যারা ঈমান আনে তাদের জান মাল আল্লাহ কিনে নেন জান্নাতের বিনিময়ে। নিচের আয়াতটি দেখুন।

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত ,ইনজীল ও কুরআনে(জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে ? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য। সুরা তওবা-১১১

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মাওলানা মওদূদী রহ লিখেন-
“ ফিকাহর আইনের ভিত্তিতে দুনিয়ার ইসলামী সমাজ গঠিত হয় তার দৃষ্টিতে ঈমান শুধুমাত্র কতিপয় বিশ্বাসের স্বীকৃতির নাম। এ স্বীকৃতির পর নিজের স্বীকৃতি ও অংগীকারের ক্ষেত্রে মিথ্যুক হবার সুষ্পষ্ট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত শরীয়াতের কোন বিচারক কাউকে অমুমিন বা ইসলামী মিল্লাত বহির্ভুত ঘোষণা করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য ঈমানের তাৎপর্য় ও স্বরূপ হচ্ছে, বান্দা তার চিন্তা ও কর্ম উভয়ের স্বাধীনতা ও স্বাধীন ক্ষমতা আল্লাহর হাতে বিক্রি করে দিবে এবং নিজের মালিকানার দাবী পুরোপুরি তার সপক্ষে প্রত্যাহার করবে। কাজেই যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের কালেমার স্বীকৃতি দেয় এবং নামায -রোযা ইত্যাদির বিধানও মেনে চলে, কিন্তু নিজেকে নিজের দেহ ও প্রাণের নিজের মন, মস্তিস্ক ও শারীরিক শক্তির নিজের ধন-সম্পদ ,উপায়, উপকরণ ইত্যাদির এবং নিজের অধিকার ও নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত জিনিসের মালিক মনে করে এবং সেগুলোকে নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করার স্বাধীনতা নিজের জন্য সংরক্ষিত রাখে, তাহলে হয়তো দুনিয়ায় তাকে মুমিন মনে করা হবে কিন্তু আল্লাহর কাছে সে অবশ্যী অমুমিন হিসেবে গণ্য হবে। কারণ কুরআনের দৃষ্টিতে কেনা-বেচার ব্যাপারে ইমানের আসল তাৎপর্য ও স্বরূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু সে আল্লাহর সাথে আদতে কোন কেনা-বেচার কাজই করেননি। যেখানে আল্লাহ চান সেখানে ধন প্রাণ নিয়োগ না করা এবং যেখানে তিনি চান না সেখানে ধন প্রাণ নিয়োগ ও ব্যবহার করা- এ দুটি কার্যধারাই চূড়ান্তভাবে ফায়সালা করে দেয় যে, ইমানের দাবীদার ব্যক্তি তার ধন প্রাণ আল্লাহর হাতে বিক্রি করেইনি অথবা বিক্রির চুক্তি করার পরও সে বিক্রি করা জিনিসকে যথারীতি নিজের মনে করেছে।”

হাদিস শরীফে এই আয়াতের একটি চমৎকার ব্যাখ্যা রয়েছে।
হুজুর স বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসলো, আল্লাহর জন্য ঘৃনা করলো, আল্লাহর জন্য দান করলো, আল্লাহর জন্যই দান করা বন্ধ করে দিলো, সে তার ঈমানকে পরিপুর্ন করে নিল।

এই হাদিসটি প্রমান করছে যে, মুমিনের ভালো লাগা আর শত্রুতাকেও নিয়ন্ত্রন করা হয়েছে, লাগামহীন ছেড়ে দেওয়া হয়নি। ঈমানের পরিপুর্নতার জন্য মানুষের ভালো লাগা আর খারাপ লাগাও আল্লাহর জন্য হওয়া বাঞ্চনীয়। এই অবস্থায় যারা স্বাধীন মতামত দান করেন বা স্বাধীন মতে ভিত্তিতে মুক্তচিন্তার নামে লাগাম ছাড়া ঘোড়ার মতো নফসের খায়েশাতে পুজায় মগ্ন রয়েছেন তারা কোন কালেই মুমিন নন। তাদের কে দুনিয়ার আদালত যদি একশত বারও মুসলমান হিসেবে সার্টিফিকেট প্রদান করে তবুও আল্লাহর কালাম ও তার রাসুলের (স) সুস্পষ্ট স্বিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা কট্টর কাফের হিসেবে পরিগনিত হবেন। এই জাতিয় লোকেরা যখন সমাজ ও রাষ্টের কর্তৃত্ব পায় তখন তারা নফসের তাড়নায় তাগুতর রুপ ধারন করে আল্লাহর মোকাবেলায় নিজেদের মতবাদ বা বিধান কে জনগনের ওপর চাপিয়ে দিয়ে একেই কল্যানকর এবং প্রগতি আর শান্তির বাহন হিসেবে ঘোষনা করে। যে সকল মুমিনরা এই মতে বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে তাদের কে অত্যাচারের স্ট্রিম রোলারে পিষ্ট করতে থাকে কেবল মাত্র নিজের মিথ্যা খোদায়ী টিকিয়ে রাখার জন্য। এ জাতিয় তাগুতদের কে অস্বিকার করাও ঈমান আনার প্রাথমিক শর্ত সমুহের অন্যতম শর্ত। প্রত্যেক নবীর বিরুদ্ধে যারা প্রথমে আওয়াজ তুলে সাধারন জনগনকে ক্ষেপিয়ে তুলতো তারা ছিল এই জাতিয় তাগুত শ্রেনীর লোক। গোটা কোরআনের পতিটি সুরা এই কথার সত্যতা প্রমান করবে। বিস্তারিত জানার জন্য কোরআনের সুরা মুমিনুন, সুরা আ’রাফ সহ নবীদের কাহিনী বর্নিত স্থানগুলো ভালো করে অধ্যায়ন করুন।

আলোচনার শেষ করতে চাই একটি আয়াত দিয়ে। আল্লাহ পাক বলেন-
لَقَدْ أَنزَلْنَا آيَاتٍ مُّبَيِّنَاتٍ وَاللَّهُ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ- وَيَقُولُونَ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالرَّسُولِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّى فَرِيقٌ مِّنْهُم مِّن بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُوْلَئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ- وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِّنْهُم مُّعْرِضُونَ- وَإِن يَكُن لَّهُمُ الْحَقُّ يَأْتُوا إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ- أَفِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ أَمِ ارْتَابُوا أَمْ يَخَافُونَ أَن يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُولُهُ بَلْ أُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ- إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ- وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَائِزُون َ

“আমি হক ও বাতিলের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী আয়তসমূহ নাযিল করে দিয়েছি। আল্লাহ যাকে চান এ আয়াতের সাহায্যে তাকে সোজা পথ দেখিয়ে দেন। লোকেরা বলে আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা (তাঁদের) আনুগত্য স্বীকার করছি ; কিন্তু পরে তাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক লোক আনুগত্য করা ছেড়ে দেয়। এ শ্রেণীর লোকেরা ঈমানদার নয়। তাদের কাজ-কারবারের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার আইন অনুসারে ফায়সালা করার জন্য যখন তাদেরকে ডাকা হয় তখন কিছু লোক অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। কিন্তু আল্লাহর আইনের ফায়সালা যদি তাদের মনের মত হয় তবে অবশ্য তা স্বীকার করে নেয়। তাদের মনের মধ্যে কি রোগ আছে ? না তারা শুধু অকারণ সন্দেহের মধ্যে ডুবে রয়েছে ? অথবা তাদের এ ভয় আছে যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তাদেও ‘হক’ নষ্ট করবেন ? কারণ যাই হোক, তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে। প্রত্যেক ঈমাদার লোকের নিয়ম এই যে, আল্লাহর আইন অনুসারে বিচার করার জন্য যখন তাদেরকে ডাকা হয় তখন তারা ‘আমরা শুনেছি এবং তা অনুসরণ করি’ বলে মাথা নত করে দেয়। বাস্তবিক পক্ষে এ শ্রেণীর লোকেরাই মুক্তি ও উন্নতি লাভ করতে পারে। আর যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের হুকুম পালন করবে, আল্লাহকে ভয় করবে এবং তাঁর নাফরমানী হতে ফিরে থাকবে কেবল তারাই সফলকাম হবে এবং মুক্তি পাবে ।”- সুরা আন নূরঃ ৪৬-৫২।

ব্যক্তিগত চিন্তা আর ভালো লাগাকে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ ও তার রাসুলের (স) রেখে যাওয়া সুস্পষ্ট দলিলের ভিত্তিতে আপনার চারপাশকে যাচাই করুন। আপনার ঈমান যদি প্রিয় হয় তাহলে আজই নিজের ইচ্ছা আর স্বাধীনতাকে সেই মহাপরাক্রমশালীর কাছে জমা দিয়ে দিন যিনি আসমান ও জমিনের সার্বভৌম ক্ষমতা একচ্ছত্র মালিক। তার ওপর কোন হুকুম দাতার অস্তিস্ত স্বিকার করে নেওয়াও শিরক।


আল্লাহ পাক আমাদের কে সঠিক স্বিদ্ধান্ত নেওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন। (চলবে ইনশায়াল্লাহ)


আল্লাহ তাআ'লা মানুষের প্রতি প্রথম যে আদেশ করেছেন সেটা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, অর্থাৎ তাওহীদ প্রতিষ্ঠ করা এবং সমস্ত প্রকার তাগুত থেকে বেঁচে থাকার জন্য।
এই কথার দলীল হচ্ছে কুরআনের এই আয়াতঃ
"আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক"।
সুরা আন-নাহলঃ ৩৬।
*আল্লাহ তাআ'লা এই আদেশ সমস্ত নবী ও তাদের উম্মতকেই করেছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ তাগুত কি? তাগুত কারা?
মরা যদি তাগুত চিনবো কি করে?
ইসলাম শেখা জরুরিএর জন্য আপনাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে, ছোট্ট এই জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেই সময় বের করে সত্যিকারের আলেমদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
তাগুতের অনুসরন করা শির্ক ও কুফুরীঃ
তাগুত শব্দ এসেছে “তাগা” যার অর্থ “সীমা লংঘন করা”, আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর উপাসনা করা হয় এবং যে এতে রাজি-খুশি থাকে, তাকে তাগুত বলা হয়।
তাগুত এর সংজ্ঞাঃ
১. আল্লাহ ছাড়া যে ব্যক্তির ইবাদত করা হয় আর সে তার ইবাদতে সন্তুষ্ট থাকে, তাকে তাগুত বলা হয়।
২. প্রত্যেক অনুসৃত অথবা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য বাদ দিয়ে যাদের আনুগত্য করা হয় তাদেরকেও তাগুত বলা হয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
“আমি প্রত্যেক উম্মাত (জাতির) কাছেই রাসুল পাঠিয়েছি, যেন তারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুত থেকে বেচে থাকে।
সুরা আন-নাহলঃ ৩৬।
তাগুত কত প্রকার?
তাগুত অনেক প্রকারের আছে তার থেকে প্রধান ৫ প্রকার উল্লেখ করা হলোঃ
১. ইবলিশঃ সে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদতের দিকে আহব্বান করে।
“হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ।
সুরা ইয়াসিনঃ ৬০-৬১।
সুতরাং আল্লাহ ছাড়া যাকিছুর উপাসনা করা হয় এর মূলে রয়েছে ইবলিশ। সেই হচ্ছে সমস্ত শিরকের হোতা।
২. আল্লাহর আইন বিরোধী অত্যাচারী শাসকঃ যে আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করে দেয় এবং মানুষের বানানো শাসনতন্ত্র কায়েম করে। যেমন কেউ যদি বলে, “চোরের শাস্তি হাত কাটা বর্বরতা, হত্যার শাস্তি (কেসাস), জিনার শাস্তি (রজম) বর্তমান যুগে চলবেনা”...
আল্লাহ কি বলেছেন দেখুনঃ
“হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। হে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।”
সুরা বাকারাহঃ ১৭৮-১৭৯।
“আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যেঃ যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ করা হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাগুতকে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো-যা তিনি রসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে।
সুরা আন-নিসাঃ ৬০-৬১।
“অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (নবী সাঃ কে) ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে তা কবুল করে নেবে”।
সুরা আন-নিসাঃ ৬৫।
৩. আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন (কুরআন+সুন্নাহ) তা বাদ দিয়ে যে বিচারক/শাসক বা নেতাগন অন্য আইন/বিধান/সংবিধান দিয়ে ফয়সালা করে। যেমন কুরান-হাদীস বিরোধী কোনো আইন রায়, কিয়াস, কারো ফতোয়া, অলিদের কথা, পীর মাশায়েখর কথা মানা, সংসদে আইন পাশ করে সমাজে চাপিয়ে দেয়া এবং বিজাতিদের মন গড়া সংবিধান মানা। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ
“যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই কাফের”।
সুরা আল-মায়িদাহঃ ৪৪।
৪. যে “ইলমে গায়েব” বা অদৃশ্য জ্ঞানের দাবী করে সে তাগুত। এদের মাঝে রয়েছে জ্যোতিষী, গণক, রাশি-চক্র ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
“তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানেনা। স্থলে ও জলে যা আছে, একমাত্র তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না, কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে”।
সুরা আনআ’মঃ ৫৯।
৫. আল্লাহ ছড়া যার ইবাদত/পূজা/উপাসনা করা হয়, এবং এতে যে রাজী-খুশি থাকে সে তাগুত। এদের মাঝে রয়েছে সেইন্ট, ঠাকুর, পীর-ফকির, ধর্মীয় গুরু, নেতা ইত্যাদি যাদেরকে পূজা করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
“তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। আমি জালেমদেরকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি”।
সুরা আল-আম্বিয়াঃ ২৯।

মূলঃ শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহহাব (রাহিমাহুল্লাহ)